Monday, December 31, 2007

শিরোনাম, স্বপ্নদেখা

বিশ্ব সংসার তন্নতন্ন করে লাল গোলাপ খুঁজতে আসিনি
এই আগমনের সাথে নব্য কোনো কাব্যও নয় সম্পৃক্ত।
এ তো শুধুই মনের গহীনে লালিত কিছু টুকরো কথা;
গোলাপের কাঁটা গেঁথে আছে হৃদয়ের অস্পৃষ্ট দেয়ালে
লাল-সবুজের আঘাতে সেথায় নীলের অঝোর ধারা।

(নিজের মধ্যে একাকী নিমগ্ন ছিলাম সবার অগোচরে-
আত্মমগ্ন কুয়াশার মোহ ছিঁড়ে গেলো কীসের আহবানে!)

অবিরাম বয়ে চলতে হয় খড়কুটো হয়ে সময়ের স্রোতে
পথের শেষ নেই- বিনাশের পরেও ছুটে চলা অন্ধকারে
আড়াল চাইনি কভু চারকোণার কোনো ঘরে আবদ্ধ হয়ে
ঈশ্বর জানেন, তিনি ভুল করেন না, পথই সেই আড়াল।

(পাতা উল্টালেই নতুন কোনো পথের নীল মানচিত্র মিলে
নীল সেই নকশায় অগণিত আঁকাবাঁকা পথের চলাফেরা।)

সারাদিন কোনো কাজ করা হয়নি, তবুও ভীষণ ক্লান্ত আমি
বিকেলবেলা এমনি একটু চোখ বুজেছিলাম ঘুমুবো বলে,
স্বপ্ন দেখি (যে স্বপ্ন দেখার অবকাশ কখনো ছিলো না আমার):
আমি ভালো আছি। ভীষণ রকম ভালো আর শুধু হাসিমুখ।।

Saturday, December 29, 2007

বন্ধু, কী খবর বল! কতোদিন দেখা হয়নি... [প্রলাপ]


সময় চলে গেছে এবং চলেছে, চলতি জীবনের গল্প বলছে। পালটে গেলি তুই, আমিও পালটে গিয়েছি মাঝপথে হাঁটতে হাঁটতে...

বড্ড আবেগী এ হৃদয়
আক্রান্ত ক্ষরণে-
কিছু কথা কী এ নশ্বর
জীবনের মানে!

জীবন মানে হাজারো ভঙ্গুর আবেগের সমষ্টিগত সমস্যা!! অ্যাবস্ট্র্যাক্ট আবেগকে ভঙ্গুর সংজ্ঞায়িত করার দায়ভার আমার ঘাড়েই বর্তাবে; লেখালেখিতে কতো না স্বাধীনতা। আর ভার্চুয়াল লাইফ ইজ ফুল অব ফ্রিডমঃ নাথিং টু ওরি এ্যাবাউট অল দ্যা বুল শিট রুলস্‌।। কী-সব প্রলাপ বকে চলেছি, তাই না? শিরোনামের মানদন্ড রক্ষা হয়তো করা হবে না। তবুও দেখি ব্যর্থতার অজুহাত খুঁজে পাই কিনা...

সুমনের গানটা (হঠাৎ রাস্তায়...) যখন শুনছিলাম, বন্ধুদের কথা ভীষণ মনে পড়ছিলো, এখনো পড়ছে বৈকি। লুপিং টেকনলজির কারণে যখন আবার গানটা বেজে ওঠবে তখন হয়তো স্মৃতিকাতরতা পুনর্জন্মলাভ করবে। মনের ভেতরে জাগে, আমিও ভন্ড অনেকের মতো...

বন্ধুত্বের কোনো সংজ্ঞা নাই, এর পরিধি নিরুপণ করা কক্ষনো সম্ভব নয়। তবুও আমার মেজাজ চরম খারাপ হয়, যখন Friend শব্দটা যখন-তখন যেখানে-সেখানে ব্যবহার করা হয়:- এর মর্ম না বুঝেই। টু হেল উইথ দেম হু ইউজড্‌ Friend এজ মিনিংলেস রিলেশনশীপ।।

no barriers, no boundaries
but
I must say "I'm not a good friend"


এমনিই বৃষ্টিতে ভিজতাম ভিজি ভিজবো
মেঘের সাথে কোনো শত্রুতা নেই,
তীব্র রোদ মাথায়, গা জ্বলে যায় উত্তাপে
তবুও বন্ধুত্ব শুধু এক সূর্যের সাথেই....

Sunday, December 16, 2007

বিজয় দিবসে আমার ব্যর্থতা

বিজয়াল্লাসে মত্ত কোনো আমার কথা বলতে আসিনি,
হাঁক-ডাক-চিৎকারে গর্বিত পুলকিত চিত্তে মেতে উঠিনি!
গদ্য-পদ্য গঠন-নিয়মকানুন ছন্দ-মাত্রাবৃত্তে পরিমার্জিত
দুরূহ শব্দে অনুসন্ধানের গল্প সাজানোর অনুচিন্তায় চিন্তিত!

আহা,
কী সব হিজিবিজি ব্যাকরণ অলংকরণ অথবা ব্যানার সম্পাদন!
আর অসম্ভব বাস্তবতা এড়িয়ে কালিমাতে সাদা প্রলেপ লেপন।
ব্যর্থতা-

পরাধীন বাংলার ক্রন্দন থেমেছিলো একাত্তরের বলিদানে।
স্বাধীন বাংলার অবিরাম ক্রন্দন রুধির ধারা হয়ে বয়ে যায়
কেনো এ ক্ষরণ আমরা সবাই জানি, শুধু জানা-বুঝাতেই!
মুখে হাজারো বুলি আওড়াই, কাগজে শতরঙের বাহার।।

বাঙালী বলেই বারবার এ কথা শুধু মার্জনা চেয়ে বলি
মায়ের অশ্রুভেজা আঁচলে লাগে কেনো দাসত্বের ধূলি!

Saturday, December 1, 2007

এবার ঘরে ফেরা

কাছে টেনে নিয়ে আমায় দূরে সরিয়ে দিয়েছে আমার আমি
কষ্টার্জিত কিছু অলস সময় করে তাকে সময় দিয়েছিলাম!
সতেজ সময়গুলো নিয়ে হাজিরা দিলাম ভালোবাসার কাছে
অবহেলায় তুচ্ছজ্ঞান করে দূরে ঠেলে দিলো, কী যে অহম!

আপন সত্ত্বার কাছে নতমুখে পরাজিত আমি এক ক্ষমাপ্রার্থী
কতশত অসংলগ্ন ঘটনাকে ক্ষমা করেছে এই আমার সত্ত্বা-
আজ আবার ঘনিয়েছে সময় পুনরায় পুনঃসংশোধনের আর্তি
আর নয় অলস সময়, আর নয় অবহেলা এবার ঘরে ফেরা।।


- ১ ডিসেম্বর ২০০৭ @ ১৮: ১৩

Wednesday, November 28, 2007

সন্ধ্যায় গানের কথা-সুরে তোমাকে..


সবকথা বলতে নেই। কিছু কথা উহ্য থাকা ভালো। গানের কথা আর সুর ছুঁয়ে যাক শুধু তাকেই যে জানে সেই গোপন কথা, যার কাছে জমা আছে সমুদ্রের দু'একটি ঢেউ।।

দু'তিন ধরে আমার শরীরটাই বেশ খারাপ যাচ্ছে। শুয়ে শুয়ে কাটাচ্ছি অসুস্থ সময়। সঞ্জীব চৌধুরী ভীষণ অসুস্থ তা জানা ছিলো। বিকেলবেলা টিভির পর্দার নীচের অংশে দেখলাম মধ্যরাতে তিনি মারা গেছেন। দুঃখ পেলাম। একটু আগে যখন একাকী বিছানায় শুয়ে আছি, তখন কিছু লাইন মনের গহীনে খেলা শুরু করলো, সেই খেলাটা অশ্রু হয়ে ঠোঁটে নোনা স্বাদ দিয়ে গেলো।

চোখটা এতো পোড়ায় কেনো, ও পোড়া চোখ সমুদ্রে যাও!
সমুদ্র কি তোমার ছেলে, আদর দিয়ে চোখে মাখাও
বুক জুড়ে এই বেজান শহর হা হা শুন্য আকাশ কাঁপাও
আকাশ ঘিরে শঙ্খচিলের শরীরচেড়া কান্না থামাও
সমুদ্র কি তোমার ছেলে, আদর দিয়ে চোখে মাখাও
আমি তোমার কান্না কুড়াই, কান্না উড়াই, কান্না তাপাই
কান্না-পানি পান করে যাই এমন মাতাল কান্না লিখি
সমুদ্র কি তোমার ছেলে, আদর দিয়ে চোখে মাখি।
চোখটা এতো পোড়ায় কেনো, ও পোড়া চোখ সমুদ্রে যাও
সমুদ্র কি তোমার ছেলে, আদর দিয়ে চোখে মাখাই

আমি পাল্টে যাচ্ছি ভীষণ করে। বেঁচে আছি শুধু এই উপলব্ধিটাই আছে। 'আমি তোমাকেই বলে দেবো' বলে আর গান গেয়ে উঠবো না। কাউকেই আর কিছু বলার নেই। জীবিত আমি আবারো মৃত হলাম বলতে গিয়েই, অনেক কম সময়ে অনেক বেশীই বলে ফেলেছিলাম। বোকা আমি! আবারো হয়তো মানুষ চিনতে ভুল করেছি। তাই পুরাতন সময়টাই আমায় হাতছানি দিয়ে ডাকে। আমিও সাড়া দিয়ে এগিয়ে যাই... বুঝি আমি হৃদয়হীন। অযথাই কড়া নেড়েছি ভুল দরজায়। দরজা কেউ খোলেনি, বরঞ্চ আমার হৃদয়টাই দুয়ার খুলে হারিয়ে গেছে।

আমি তোমাকেই বলে দেবো,সেই ভুলে ভরা গল্প-
কড়া নেড়ে গেছি ভুল দরজায়
ছুঁয়ে কান্নার রং, ছুঁয়ে জোছনার ছায়া

আমি কাউকে বলিনি সে নাম,
কেউ জানেনা না জানে আড়াল
জানে কান্নার রং, জানে জোছনার ছায়া

তবে এই হোক তীরে জাগুক প্লাবন,
দিন হোক লাবণ্য হৃদয়ে শ্রাবণ
তুমি কান্নার রং, তুমি জোছনার ছায়া

আমি তোমাকেই বলে দেবো, কী যে একা দীর্ঘ রাত-
আমি হেঁটে গেছি বিরান পথে

কতো কাজ জমা পড়ে আছে! কিছুই করা হয়নি, প্রচন্ড মাথাধরা নিয়ে বসলাম কাজ গোছাতে। কিন্তু ভীষণ একটা কষ্ট এ লেখায় আমায় নিয়ে এলো।


কথা বলবো না আগের মতো কিছু নেই
পিছু ডাকবো না, পিছু ডাকার কিছু নেই
সর্বনাশী ঝড়, বুকে উড়ে যাবার কিছু নেই
আগুনে পুড়েছি এ হাত বাড়িয়ে পুড়ে যাবার কিছু বাকি নেই

চোখ ফিরে চায়, পাতা ঝরার দিন যায়
তবু আজীবন কান্না মেঘে দিনযাপন
আমি ভালো নেই, ভালো থাকার কিছু নেই
রাখবো না ধরে যে আর ধরে রাখার কিছু নেই

পাখি অন্য ঘরে, গান গায় অন্য সুরে
এ ঘর অন্ধকার, তারার আলো কোন ঘরে
ঘরে ফিরবো না, ঘরে ফেরার কিছু নেই
রাখবো না ধরে যে আর ধরে রাখার কিছু নেই

হৃদয়হীন আমারও ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। বুঝেছি।। আগুনে পুড়েছি এ হাত বাড়িয়ে পুড়ে যাবার কিছু বাকি নেই.. এবার আর কিছু হবার নয়, শুধু ফুরিয়ে যাওয়া।।
১৮:৫৭, ১৯ নভেম্বর ২০০৭

মিছিলের গান


গা গান গান গান গান তুই গান গেয়ে যা
ঠোঁটে তুলে নে কোনো অমিত শ্লোগান
এ পথ ধরে ধরে হেঁটে চল বহুদূর
পিছে পড়ে থাক সব চেনা অভিমান।

ঐ আকাশে আকাশে কতো রঙ রোদ হাসে
কতো চেনা সুর ইশারায় ছুঁয়ে যায়
অন্ধ বধির এই থাকে পরবাসে
মুখরতা ডাকে সে ফিরে আসেনা
ঘুম ঘুম ঘুম ঘুম ঘুম চোখে চোখ বুজে রয়
আগামীর গান থাকে স্মৃতির ছায়ায়

ঐ মিছিলে মিছিলে ভাসে লাশ, লাশ ভাসে
প্রান্তরে পড়ে থাকা প্রান্তিক মুখ
সব দেয়ালে দেয়ালে লেখা প্রতিবাদ গান
বুলেট রুখে দেয় মানুষের বুক
ঐ সূর্য সারথী পাখি গান গেয়ে যায়
ঘুম চোখে জেগে ওঠে ভোরের মায়ায়।



মিছিলের গান

Tuesday, November 27, 2007

আড়াল বোধ পরাজয়


সেদিনের পর থেকেই কিছু কথা পাঠাতে গেলেই
একগাদা সংকোচবোধ তাড়া করে আমায় ;
যদিও মাঝে একবার কী যেন লিখে পাঠিয়েছি
কিন্তু সে আড়ালটা আর থাকছে না...
কবিতা ভালোবাসি, তাই কবিতা প্রতিদিন
গান ভালোবাসি, তাই চলে আসে প্রিয় গান;
যদিও মাঝে একবার কী গান যেন শুনিয়েছি
কিন্তু সে আড়ালটা আর থাকলো না...
আজ সেই আড়াল নেই
আজ সেই কথা নেই
নেই আজ সেই প্রিয় গান
কবিতাগুলিও কেমন যেন হয়ে গেছে
মাঝে মধ্যেই ধমকে উঠে....
তাই ভাবি, কেন যে এতো বুঝি!!!

Monday, November 26, 2007

কী বিস্ময়কর পৃথিবী আমাদের!


সবুজ বৃক্ষরাজি আর লাল গোলাপের সমাহার
দেখে যাই সবকিছুই, চোখ এড়িয়ে যায়নি-
তাদের ফুটে উঠা- আমাদের হৃদয়ের আলোড়ন
ভাবনা জাগে, কী বিস্ময়কর এই পৃথিবী আমাদের!

দৃষ্টি উড়ে নীলাকাশে- চরে বসে শুভ্র মেঘের ভেলায়
ঘুম ভাঙতেই দেখি সূর্যের আশীর্বাদপুষ্ট সোনালি দিন
নিকষ কালো পবিত্রতার ছোঁয়া মিলে নয়নের আলোয়
ভাবনা জাগে, কী বিস্ময়কর এই পৃথিবী আমাদের!

রংধনুর সাতরঙা অস্পৃশ্য প্রতিচ্ছবিটা আগলে রাখে চোখ।
রং সারা পৃথিবী জুড়ে, যারা যাচ্ছে চলে পাশ কাটিয়ে
বন্ধুদের হাত মিলানো আর কুশল বিনিময় দেখে যাই-
ভাবনা জাগে, তারা বলে যায় "তোমায় ভালোবাসি"।

শিশুদের কান্নাও শুনেছি আবার বেড়ে উঠাও দেখেছি
অবাক হয়ে জেনেছি ওরাও অনেক কিছু্ই শিখে যাচ্ছে...
কতোই না রহস্য সর্বত্র! কী সুন্দর এই বেঁচে থাকা!
ভাবনা জাগে, কী বিস্ময়কর এই পৃথিবী আমাদের!

ডিসক্লেইমারঃ
Kenny G's What a wonderful world গানের আলোকে নিজের মতো করে কবিতা লেখার চেষ্টা করলাম। এ গানটার জন্য একজনের ধন্যবাদ প্রাপ‌্য। তবে এখানে সে ঋণ শোধ নাই বা করলাম!

Friday, November 23, 2007

শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ হতে রৌদ্রদগ্ধ কালো ধোঁয়ার পথ

অশুচি আমি নিছক ভাবনার খেয়ালে শুচি হই
অবান্তর প্রশ্নটা শুধাই নিজেকে 'কেমন আছো?'
'ভালো' জবাবটা শোনালো প্রবোধের মতোই ।
হেসে ওঠি, পরম আমার জবাবটাও ঠিক তাই!
'ভালো নেই' বলতে বলতে বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়ি
অলস আমি বলি 'ভালো'। কারণ দর্শাতে হয় না।
জোর-করা একটা হাসি নিয়ে আসি- বিভ্রান্তিকর।
মনে মনে বলি 'বোকা'। অশুচি হয়ে বলে যাই-
কারো ছোঁয়া চাই না। সুখ হোক কিংবা দুঃখ!
ভোতা কিছু অনুভূতি নিয়ে বেঁচে থাকতে চাই
সদা গতিশীল সমাজে পরিবর্তনশীল প্রাণী- মানুষ;
আদর্শ বজায় রেখে সামাজিকতা দেখাতে পারি কই!

শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ ছেড়ে রৌদ্রদগ্ধ কালো ধোঁয়ার পথে
কতো ভীড়! সবার মাঝে একাকী বসে আছি বাতাস ঘেঁষে
সাদা পাতায় কালিমা লেপছি আবোল তাবোল...
ছোটলোক। ভালোবাসা বুঝিনা। পাগল। কুপমন্ডুক।
হরেক উপাধি নিয়ে বিচরণ করে বেড়াচ্ছি প্রতিনিয়ত।
শ্লোগান শ্লোগানে মুখরিত তাই সত্ত্বার ভিতর-বাহির-
"বিকৃত সময়ে বিকৃত মনোভাবে বিকৃত মানুষগুলোর রুচি
চিৎকার করি জ্বলে পুড়ে ছারখার তবুও আমি নাকি অশুচি!"

Tuesday, August 28, 2007

ভাবনাদের টানাপোড়নে

কেন্ এমন কইরা বদলইয়া যায় ভাবনাগুলা?
ঘরের মইধ্যে থাইক্যা কয়-

মন জুড়ে আমার গোটা আকাশ;
গগন-মনন আমার আমি।
আকাশতলে গিয়া বইল্যা ওঠে-
ঘর যে টানে বড়ো,
আকাশ মোরে ছাড়ো;
ঘরের মায়া যায় না ভোলা!
ঘরবাহিরের টানাপোড়নে

অসীম জ্বালা এই অন্তরে;
প্রার্থনা তাই তাঁহার সনে-
স্থির করো এই মনটারে।

Wednesday, June 27, 2007

কফির কাপ হাতে আলোকিত সন্ধ্যায়

প্রথম চুমুকঃ

ঠান্ডা হয়ে এসেছে প্রায়- বিচ্ছিরি ধরনের কটুস্বাদ।

শরীরের কেমন যেনো বিদ্রোহ প্রকাশ।

দ্বিতীয় চুমুকটা কেমন হবে সেই অপেক্ষায় চিন্তাযুক্ত।

তবে অপেক্ষার অবসান তার বাহকের কাছেই।

বাহক আমি, নেবো নেবো করেও চুমুক দেয়া হচ্ছে না।

লাল-সাদার এই কফির মগের সাথে চলছে এ কেমনতর খেলা!

অবশেষে...


দ্বিতীয় চুমুকঃ

একটা মশা এসে বসলো মধ্যমায়-বাঁ-হাতের তর্জনী উদ্ধত হয়ে উঠতেই

দিলো এক উজাড় উড়াল- গন্তব্য কোথায়!

ওহ! যা বলছিলাম, এই চুমুকেও ব্যতিক্রম কিছু হলো না,

আমার ক্ষীণতনু আবারো বিদ্রোহ প্রকাশ করছে।

এই একাকী সন্ধেবেলায় এই ঠান্ডা হয়ে আসা গাঢ় রঙের তরল পদার্থ তার ভালো লাগছে না কিছুতেই।

আর মননশীল আমার মনের তো কোনো খোঁজই নেই

সে যেকোনো উপায়ে মনের মানুষটাকে চাচ্ছে- ভালোবাসা!

তৃতীয় বারের মতো শরীরের উপর আবার অত্যাচার শুরু...


তৃতীয় চুমুকঃ

"এ কেমনতর স্বাদরে কফির!? অসহ্য"

চেঁচিয়ে উঠলো রক্তমাংসের শরীরটা।

"ঠান্ডা হয়ে যাওয়া কফি কেউ খায় নাকি!? অসহ্য"

বলতে বলতে তিরস্কার করতে থাকলো আমায়।

আমিও আর কালক্ষেপণ না করে চতুর্থবারের মতো ঠোঁটে তুলে দিলাম।


চতুর্থ চুমুকঃ

গর্জে উঠলো স্বাদগ্রন্থিগুলি, "দূরছাই!!

একী অত্যাচার আমার উপর! বন্ধ কর্ বন্ধ কর্।"

শরীরের অবিরাম ভৎসর্ণা তিরস্কারে মন ফিরে

এই ছোট্ট যন্ত্রসংগীতমুখর আলোকিত ঘরটায়।

মন ফিরে আসে তার সনাতন সেই আবাসস্থলে।

অবাক হয়ে ভাবে কত্তো মানুষ! নারী-পুরুষে

গমগম করছে ঘরখানা; তবু সে শুনেনা কিছুই

এই ভীড়ের মাঝে সে ভীষণ একা। হারাই হারাই ভাব!

"এই যে!" ফুসে ওঠে ১০৯ পাউন্ডের দেহখানা;

"কী হলো?? ভয়ে ভয়ে জবাব দেয় আমার মন।

"আমার উপর কী অত্যাচার হচ্ছে দেখেছিস? ঠান্ডা বিচ্ছিরি টাইপের কফি নামক বিষ আমায় খাওয়ানো হচ্ছে বিরতি দিয়ে দিয়ে। তুই কী করছিস?!"

"ওহ! তাই নাকি! কই দেখি তো এক চুমুক খেয়ে।"

প্রথমবার দেহমনের সমন্বয়ে হাত বাড়ালাম কফির কাপটার দিকে পঞ্চমবারের জন্যে..

কিন্তু একী! তলানীতে পড়ে আছে কয়েক ফোঁটা।

কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই বেয়ারা এসে নিয়ে গেলো এতক্ষণের সঙ্গীকে।

দেহ-মনের আবার বিচ্ছেদ।

দেহের তৃষ্ণা পঞ্চম চুমুকের... উঠে দাড়ায় চেয়ার ছেড়ে।

মনের তৃষ্ণা ভালোবাসার... হারায় অজানায় অচেনায়।

পরিশিষ্ট:

তুই আসিসনি এখনো বন্ধুদের আড্ডায়

ক্লান্ত দিনের শেষে কোনো ক্যাফেতে

কফির কাপ হাতে আলোকিত সন্ধ্যায়

ভাসাসনি আমাকে তোর হাসিতে।

বাবুইয়ের বুনে চলার অবিরাম চেষ্টাতে

নেমে আসছে নিরাশার ছায়াপরিত্যক্ত হচ্ছে একে একে নীড়গুলো

পরিশ্রান্ত আমার ভালোবাসা।

_______________________________

স্থানঃ ক্যাফে লা ভারেন্দা, আলিয়্যঁস ফ্রস্যেঁজ, ঢাকা।কালঃ ১৮:৪৫


*****পরিশিষ্ট অংশ 'বাংলা এভিনিউ'র 'চন্দ্রাস্ত' গানের কয়েকটি লাইন। গানখানার লিংক দিলামঃ চন্দ্রাস্ত

Saturday, February 17, 2007

"বাবা, আপনাকে খুব ভালোবাসি"

এ যে রক্তের সাথে রক্তের টান- স্বার্থের অনেক ঊর্ধ্বে...
"বাবা, আপনাকে খুব ভালোবাসি।" কথাটা আজ পর্যন্ত বলতে পারিনি। ছোট বেলায় বলেছিলাম কিনা মনে নেই। কিন্তু বুঝে উঠা শিখার পর বলেছি কিনা মনে পড়ে না। অথচ বাবা কতোই না আপন।
মা-কে তুমি বললেও বাবাকে সবসময় আপনি করেই বলে এসেছি। আজও বলি। দূরত্ব? তা মনে করি না। বাবার সাথে গান শুনতাম আগেও, এখনো শুনি। যার সাথে নিজের সবচেয়ে প্রিয় কাজটি শেয়ার করতে পারি, তার সাথে কীসের দূরত্ব! বাবার সাথে সম্পর্কটা ঠিক কেমন জানি, বুঝি না। পাঁচ ভাইবোনদের মধ্যে সবার ছোট আমি। আমার প্রতি সবার ভালোবাসাটা একটু বেশীই। সবার চিন্তা আমাকে নিয়ে। স্নেহের জোয়ারে এখনো ভাসি যখনতখন।
সেদিন অবরোধ ছিলো। খুব জরুরী কাজে মতিঝিল যাওয়া খুব প্রয়োজন। আম্মাকে কোনোভাবে ম্যানেজ করলাম। আব্বা কিছুতেই রাজি হলেন না। তাঁর এক কথা- “টাকা-পয়সার ক্ষতি হলে হোক, যাওয়ার কথা মুখে এনো নাÓ।
আমার এক বন্ধুর কথা বলিঃ উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার সময় সে কয়েকটা পরীক্ষা দিয়ে পলাতক হয়েছিলো (ভেবেছিলো ফেল করবে কিন্তু করেনি, এই না হইলো নটরডেমিয়ান!)। অনেকটা দেশভ্রমণের মতো। বেশ কিছুদিন পর সে বাসায় ফিরলো। তখন ওর বাবা ওকে ডেকে নিয়ে পাশে বসায়। তারপর ছেলেকে জড়িয়ে ধরে সে কী কান্না। বন্ধুটি ভাবতো, বাবা একটা কাঠখোট্টা মানুষ। তার ভুল ভাঙলো। আসলে বাবারা হয়তো আবেগ তেমন করে প্রকাশ করেন না।
বাবা- যার জন্যে মাকে পেয়েছি, আমি আমি হয়েছি, কতো ভালো চারটি ভাই-বোন পেয়েছি, অসীম ভালোবাসায় এতোদূর এসেছি, তাকে সহস্র সালাম। শুধু মুখ ফুটে বলতে পারি না "তোমাকে ভালোবাসি বাবা"।
জানাতে যতো যাই কথায় হারাই ততোই মানে, ভালোবাসি তোমায় তাই জানাই গানে...

"ছেলে আমার বড়ো হবে"
মাকে বলতো সে কথা,
"হবে মানুষের মতো মানুষ একলেখা ইতিহাসের পাতায়"
নিজ হাতে খেতে পারতাম নাবাবা বলতো,
"ও খোকা! যখন আমি থাকবো না, কী করবি রে বোকা! "
এ যে রক্তের সাথে রক্তের টান-
স্বার্থের অনেক ঊর্ধ্বে
হঠাৎ অজানা ঝড়ে তোমায় হারালাম
মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো;
বাবা কতোদিন কতোদিন দেখিনা তোমায়
কেউ বলেনা তোমার মতো
"কোথায় খোকা! ওরে বুকে আয়।"
বাবা কতোরাত কতোরাত দেখিনা তোমায়
কেউ বলেনা "মানিক, কোথায় আমার! ওরে বুকে আয়।"
চশমাটা তেমনি আছে,আছে লাঠি ও পাঞ্জাবী তোমার,
ইজি চেয়ারটাও আছে নেই সেখানে
অলস দেহ শুধু তোমার;
আযানের ধ্বনি আজ শুনি,
ভাঙাবে না ভোরে ঘুম জানি,
শুধু শুনি না তোমার সেই দ্বরাজ কন্ঠে পড়া
পবিত্র কুরআনের বাণী।
বাবা কতোদিন কতোদিন দেখিনা তোমায়
কেউ বলেনা তোমার মতো
"কোথায় খোকা! ওরে বুকে আয়।"
বাবা কতোরাত কতোরাত দেখিনা তোমায়
কেউ বলেনা "মানিক, কোথায় আমার! ওরে বুকে আয়।"

২০০২ এর ডিসেম্বরে যখন মা-বাবা প্রবাসে গেলেন, ভেবেছিলাম কোন ব্যাপার না। আমি হলাম আবেগহীন মানুষ। কিছুই মনেটনে পড়বে না। কাউকেই না। কিন্তু মনে পড়ে। খুব পড়ে। কাছে পাওয়ার জন্য মনটা কেমন যেনো হয়ে যায়। যখন জেমসের এ গানখানা শুনি তখন হৃদয়ক্ষরণ কে আটকায়! কিছুদিন হলো মা-বাবা দেশে ফিরেছেন। ভাবি অবসর সময়ে কোথাও যাবো না। তাঁদের সাথেই থাকবো। কিন্তু পারি না। কেমন জানি হয়ে গেছি।! সেদিন শুনলাম পথিকের বাবা অসুস্থ; পরদিন শুনি তিনি মারা গেছেন। অজান্তেই চমকে উঠলাম- আমার বাবাও তো একদিন চলে যাবেন। প্রবাসে থাকলে তো অন্তত ফোনে কথা হয়, তখন তো আর কথাও হবে না। ভাবনাগুলোকে তাড়াতে পারি না। সত্যকে একদিন বরণ করে নিতেই হবে। জীবনের একটা সত্য, সেটা হলো মৃত্যু। সবাইকে বিদায় দিতে হবে, বাবা-মা-ভাই-বোন... ভাবি যদি কাউকেই বিদায় না দেয়া লাগতো। সবার আগে আমি চলে যেতাম, তাহলে বেশ হতো।...