Sunday, November 12, 2006

বন্ধুত্ব মানে

বন্ধুত্ব মানে-
মাটি আর আকাশে সুদূরপ্রান্তে সংঘবদ্ধ দাবি,

বন্ধুত্ব মানে-
সাগর-ঝর্ণা মাঝে মিলনের তলে বয়ে চলা কোন নদী।


বন্ধুত্ব এমন একটা শব্দ যার অর্থ আজও বুঝে উঠা হলো না। হন্যে হয়ে খুঁজে ফিরি। কবিতা-গান। উক্তি। কথোপকথন। গল্প-উপন্যাস-নাটক-সিনেমা। আরো কতো কীসে চলে রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা। মাঝে মাঝে আনন্দে লাফিয়ে ওঠি, এই তো বুঝেছি! পরক্ষণেই হোঁচট খাই। ‘নাহ্ ইহা যথার্থ নয়’ বলতে হয়। ধর্মগ্রন্থেও চোখ রাখি; এতো নিয়ম-কানুন! মন মানে না। ধরা-বাঁধা কোন নিয়মের গন্ডিতে বন্ধুত্বকে বেঁধে ফেলতে সে রাজি নয়। সে চায় সর্বদা সর্বস্তরে বন্ধুত্বের অবাধ বিচরণ। মুক্ত বিহঙ্গের মতো। ‘বীক্ষ্যমান’ বিশেষণে বিশেষণীয় হয় না বন্ধুত্ব।


বন্ধুত্বকে শুধু একটি কথায় বা শুধু একটি গানে কিংবা শুধু একটি কবিতায় সংজ্ঞায়িত করা যায়নি; এক কথোপকথনেই সীমাবদ্ধ করা যায়নি তার সীমানা। বন্ধুত্বের গভীরতা প্রকাশ সম্ভব হয়নি একটি মাত্র গল্পে অথবা উপন্যাসে। একখানা নাটক অথবা একখানা সিনেমা বানিয়েই বন্ধুত্বের মডেল বা আইকন স্থাপন করা যায় নি। বন্ধুত্ব নিয়ে লেখা হয়েছে কতো না কবিতা-গল্প-উপন্যাস! বন্ধু বন্ধুকে গেয়ে শুনিয়েছে কতো না গান! কতো না কথোপকথন! কথা চলছে অবিরাম বন্ধুকে নিয়ে। ছোট-বড়ো পর্দায় ভেসে উঠছে কতো না নাটক-সিনেমা! চলছে... চলবেই।


যাকে বন্ধু বলে পরিচয় দেই, কখনো কি ভেবে দেখেছি কেন তাকে বন্ধু বলছি।! না, ভাবি না। বন্ধুত্ব কোন সুনির্দিষ্ট যোগ্যতা বিচার করে না। বয়সে বন্দি নয় বন্ধুত্ব। লিঙ্গান্তর নিয়ে বিভেদ নেই বন্ধুত্বে। শিক্ষা-অর্থবিত্ত-ধর্ম মানে না বন্ধুত্ব। কখনো কখনো রাস্তার একজন অশিক্ষিত টোকাই বন্ধু হয়ে যায়। বন্ধু শিক্ষিত হতে হবে এমন তো কোন কথা নেই। কখনো কখনো একজন অসুন্দর মানুষ প্রাণের বন্ধু হয়ে যায়। বন্ধুত্বেই পবিত্র সৌন্দর্য খুঁজে পাওয়া যায়। একজন চরম নাস্তিকও বন্ধু হয়। বন্ধুত্ব যে কখন কোথায় তার স্থান দখল করে তা কেউ বলতে পারেনি, পারবেও না।

জয়... বন্ধুত্বের জয়।।


বন্ধুত্বের অসংখ্য গানের সমারোহ হতে একটি গান, সবার জন্য-


বন্ধুত্ব মানে-
বয়সের সাথে বয়সের মিল নয়
বন্ধুত্ব মানে-
মনের সাথে মনের, গোপনে হয়ে যাওয়া পরিচয়।


বন্ধুত্ব মানে-
একাকীত্বের প্রতি অভিশাপ
বন্ধুত্ব মানে-
খুব প্রয়োজনে, খুঁজে পাওয়া ওই দুটি হাত।


বন্ধুত্ব মানে-
কবিতা কিংবা গানে
শব্দে-বর্ণে ছন্দের মতো নয়
বন্ধুত্ব মানে-
ছবির মতো করে
চোখে চোখ রেখে কথোপকথন নয়।


বন্ধুত্ব মানে-
মাটি আর আকাশে
সুদূরপ্রান্তে সংঘবদ্ধ দাবি
বন্ধুত্ব মানে-
সাগর-ঝর্ণা মাঝে
মিলনের তলে বয়ে চলা কোন নদী।


বন্ধু আমার, যেখানেই থেকে যাও
খুঁজে পেতে পারি হঠাৎ স্মরণে
বন্ধুত্বের ছলে, ছলে-বলে-কৌশলে
ধরা দিয়ো না মিছিমিছি ভালোবেসে;
বন্ধুত্ব মানে-
গোটা পৃথিবীটা তোমার
হতে পারে বন্ধুত্বের দাবিদার
বন্ধু আমার, বন্ধু তোমার,
বন্ধু তুমি হয়ে যেতে পারো সবার।


Friday, July 28, 2006

অমরত্ব তাচ্ছিল্য করেছি

শুধু মৃত্যুর জন্য এই জন্ম,
শুধু মৃত্যুর জন্য কিছু খেলা,
শুধু মৃত্যুর জন্য একা হিম সন্ধেবেলা
ভুবন পেরিয়ে আসা।
শুধু মৃত্যুর জন্য অপলক মুখশ্রীর শান্তি একঝলক।
শুধু মৃত্যুর জন্য এত রক্তপাত, মেঘে গাঙ্গেয় প্রপাত।
শুধু মৃত্যুর জন্য, আরো বেঁচে থাকতে লোভ হয়-
মানুষের মতো ক্ষোভময় বেঁচে থাকা।

শুধু মৃত্যুর জন্য আমি অমরত্ব তাচ্ছিল্য করেছি।।



[বাণী বসুর একুশে পা উপন্যাসে -শুধু কবিতার জন্য এই জন্ম - দিয়ে শুরু একটা কবিতা পড়েছিলাম। তখনই ঐ কবিতার অনুকরণে আমি এই কয়েকলাইন লিখি। কিছু অংশ বাদও দিয়েছি। কবিতাটা ছিলো সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের। এই কবিতায় আমি কবিতাকে মৃত্য হিসেবেই পেয়েছি।]

Tuesday, April 4, 2006

সেই তুমি আজ

বহুদিন পর হলো দেখা
তোমার সাথে-
যাবার পথে।
এতোদিনে কেটে গেছে,
উড়ে উড়ে ভেসে গেছে
প্রায় তেরশ বছর।
তুমিও অনেকটা বুড়িয়ে গেছো।


ভাবিনি, তবুও আবার
পেলাম তোমার দেখা,
যে তুমি ছিলে আড়ালে- অদেখা।
কিন্তু এতটাই বুড়িয়ে গেলে এখন!


তোমাকেই দেখেছিলাম আমি
প্রথমবার চোখ মেলে
সেই তোমাকেই চেয়েছিলাম দেখতে
চোখ বোজার মুহূর্তে।


সেই তুমি আজ এতটা জীর্ণ!
তুমিও রেহাই পাওনি!


হে বিধাতা!
তুমি এতটাই নিষ্ঠুর কেন??


এপ্রিল ২০০৬