Wednesday, June 27, 2007

কফির কাপ হাতে আলোকিত সন্ধ্যায়

প্রথম চুমুকঃ

ঠান্ডা হয়ে এসেছে প্রায়- বিচ্ছিরি ধরনের কটুস্বাদ।

শরীরের কেমন যেনো বিদ্রোহ প্রকাশ।

দ্বিতীয় চুমুকটা কেমন হবে সেই অপেক্ষায় চিন্তাযুক্ত।

তবে অপেক্ষার অবসান তার বাহকের কাছেই।

বাহক আমি, নেবো নেবো করেও চুমুক দেয়া হচ্ছে না।

লাল-সাদার এই কফির মগের সাথে চলছে এ কেমনতর খেলা!

অবশেষে...


দ্বিতীয় চুমুকঃ

একটা মশা এসে বসলো মধ্যমায়-বাঁ-হাতের তর্জনী উদ্ধত হয়ে উঠতেই

দিলো এক উজাড় উড়াল- গন্তব্য কোথায়!

ওহ! যা বলছিলাম, এই চুমুকেও ব্যতিক্রম কিছু হলো না,

আমার ক্ষীণতনু আবারো বিদ্রোহ প্রকাশ করছে।

এই একাকী সন্ধেবেলায় এই ঠান্ডা হয়ে আসা গাঢ় রঙের তরল পদার্থ তার ভালো লাগছে না কিছুতেই।

আর মননশীল আমার মনের তো কোনো খোঁজই নেই

সে যেকোনো উপায়ে মনের মানুষটাকে চাচ্ছে- ভালোবাসা!

তৃতীয় বারের মতো শরীরের উপর আবার অত্যাচার শুরু...


তৃতীয় চুমুকঃ

"এ কেমনতর স্বাদরে কফির!? অসহ্য"

চেঁচিয়ে উঠলো রক্তমাংসের শরীরটা।

"ঠান্ডা হয়ে যাওয়া কফি কেউ খায় নাকি!? অসহ্য"

বলতে বলতে তিরস্কার করতে থাকলো আমায়।

আমিও আর কালক্ষেপণ না করে চতুর্থবারের মতো ঠোঁটে তুলে দিলাম।


চতুর্থ চুমুকঃ

গর্জে উঠলো স্বাদগ্রন্থিগুলি, "দূরছাই!!

একী অত্যাচার আমার উপর! বন্ধ কর্ বন্ধ কর্।"

শরীরের অবিরাম ভৎসর্ণা তিরস্কারে মন ফিরে

এই ছোট্ট যন্ত্রসংগীতমুখর আলোকিত ঘরটায়।

মন ফিরে আসে তার সনাতন সেই আবাসস্থলে।

অবাক হয়ে ভাবে কত্তো মানুষ! নারী-পুরুষে

গমগম করছে ঘরখানা; তবু সে শুনেনা কিছুই

এই ভীড়ের মাঝে সে ভীষণ একা। হারাই হারাই ভাব!

"এই যে!" ফুসে ওঠে ১০৯ পাউন্ডের দেহখানা;

"কী হলো?? ভয়ে ভয়ে জবাব দেয় আমার মন।

"আমার উপর কী অত্যাচার হচ্ছে দেখেছিস? ঠান্ডা বিচ্ছিরি টাইপের কফি নামক বিষ আমায় খাওয়ানো হচ্ছে বিরতি দিয়ে দিয়ে। তুই কী করছিস?!"

"ওহ! তাই নাকি! কই দেখি তো এক চুমুক খেয়ে।"

প্রথমবার দেহমনের সমন্বয়ে হাত বাড়ালাম কফির কাপটার দিকে পঞ্চমবারের জন্যে..

কিন্তু একী! তলানীতে পড়ে আছে কয়েক ফোঁটা।

কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই বেয়ারা এসে নিয়ে গেলো এতক্ষণের সঙ্গীকে।

দেহ-মনের আবার বিচ্ছেদ।

দেহের তৃষ্ণা পঞ্চম চুমুকের... উঠে দাড়ায় চেয়ার ছেড়ে।

মনের তৃষ্ণা ভালোবাসার... হারায় অজানায় অচেনায়।

পরিশিষ্ট:

তুই আসিসনি এখনো বন্ধুদের আড্ডায়

ক্লান্ত দিনের শেষে কোনো ক্যাফেতে

কফির কাপ হাতে আলোকিত সন্ধ্যায়

ভাসাসনি আমাকে তোর হাসিতে।

বাবুইয়ের বুনে চলার অবিরাম চেষ্টাতে

নেমে আসছে নিরাশার ছায়াপরিত্যক্ত হচ্ছে একে একে নীড়গুলো

পরিশ্রান্ত আমার ভালোবাসা।

_______________________________

স্থানঃ ক্যাফে লা ভারেন্দা, আলিয়্যঁস ফ্রস্যেঁজ, ঢাকা।কালঃ ১৮:৪৫


*****পরিশিষ্ট অংশ 'বাংলা এভিনিউ'র 'চন্দ্রাস্ত' গানের কয়েকটি লাইন। গানখানার লিংক দিলামঃ চন্দ্রাস্ত